ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং কেন, প্রকারভেদ, সুবিধা, শেখার উপায়

সংখ্যাতত্ত্ব ও গবেষণার ওপর নির্ভর করে ডিজিটাল মিডিয়া ও ডিজিটাল প্রযুক্তিকে (Digital Media and Technology)কাজে লাগিয়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবার বিক্রয় করাকে ডিজিটাল মার্কেটিং (Digital Marketing) বলা হয়।

আগেকার দিনে বিজ্ঞাপন (Advertisement) দেওয়া হতো পোস্টার এর মাধ্যমে। কোন জনবহুল অঞ্চল বা কোনো বড় রাস্তার সামনে পোস্টারগুলো টানিয়ে দেয়া হতো। এভাবে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ফলে বহু লোক সেই নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট (Product) এর ব্যাপারে জেনে যেত।

তখনকার দিনে বিজ্ঞাপনদাতারা বিশ্বাস করতেন, কোন বিজ্ঞাপন যত বেশি লোক দেখতে পাবে জিনিসের বিক্রি ততই বেশি হবে।

কিন্তু যতদিন এগিয়েছে সংখ্যাতত্ত্ব এবং গবেষণার মাধ্যমে জানতে পারা গেছে যে, লোকজনকে শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন দেখালেই হবে না। আগ্রহী লোকজনকে বা target audience কে বিজ্ঞাপন দেখালে তবেই ব্যবসার উন্নতি হবে।

আজ  দিন বদলেছে, টেকনোলজির দৌলতে প্রত্যেকের হাতে মোবাইল ফোন এসেছে। আর তার সাথে সাথে পাল্টে গেছে বিজ্ঞাপন দেওয়ার রীতি নীতি।

এখন বিজ্ঞাপনদাতারা চেষ্টা করেন শুধুমাত্র নির্দিষ্ট প্রোডাক্টের জন্য আগ্রহী লোকেদের সামনে সেই প্রোডাক্ট এর বিজ্ঞাপন তুলে ধরার জন্য।

মার্কেটিং এর দিক থেকে যদি আমরা ভেবে দেখি তবে ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিজ্ঞাপন দেওয়ার পদ্ধতি খুবই যুক্তি যুক্ত।

যদি কোন ব্যাক্তি ছাতা কিনতে চান এবং তার সামনে যদি গাড়ির বিজ্ঞাপন তুলে ধরা হয় , তবে গাড়ি এবং ছাতা দুটির কোনটিই বিক্রি হবে না।

ডিজিটাল মার্কেটিং কি?

ডিজিটাল মার্কেটিং (digital marketing) দুটি শব্দের সমন্নয়ে তৈরি হয়েছে, ডিজিটাল এবং মার্কেটিং। এখানে ডিজিটাল শব্দটি ইন্টারনেটের সাথে সম্পর্কিত এবং মার্কেটিং শব্দটি বিজ্ঞাপনের সাথে সম্পর্কিত।

এর থেকে আন্দাজ করা সহজ যে এটি একটি উপায় যার সাহায্যে কোন সংস্থাগুলি তাদের পণ্য মার্কেটিং করে এবং যে মাধ্যমে এই মার্কেটিং টি করা হয় টা হল বৈদ্যুতিক মাধ্যমে।

ডিজিটাল মার্কেটিং কেন এত গুরুত্বপূর্ণ || ডিজিটাল মার্কেটিং কেন প্রয়োজন

“ডিজিটাল মার্কেটিং কেন করবেন?” – ডিজিটাল মার্কেটিং যে কোন ব্যবসা কে বৃদ্ধি এবং নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর এক দুর্দান্ত সুযোগ তৈরি কতে দিতে পারে। এর ঠিক এই কারনে আজ, সারাবিশ্বে প্রচুর ছোট ছোট ব্যবসা ডিজিটাল মার্কেটিং (digital marketing) এর গুরুত্ব বুঝেছে এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এ বিনিয়োগ শুরু করেছে। @DigitComputer.in

See also  ওয়েবসাইটের প্রয়োজনীয়তা: আপনার ব্যবসার ডিজিটাল প্রেসেন্স বৃদ্ধির জন্য ওয়েবসাইটের গুরুত্ব

বর্তমানে যে সমস্ত কারনে ডিজিটাল মার্কেটিং প্রতিটি ব্যাবসার জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে সে গুলি হল –

খুব সহজে নির্দিষ্ট audience এর কাছে বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেওয়া সম্ভব : ইন্টারনেট এর বিস্তার এর সাথে সাথে বহু মানুষ বিভিন্ন কাজের জন্য ইন্টারনেট এর ব্যবহার শুরু করেছেন। যদি আমারা বলি আজ ইন্টারনেট প্রাত্যহিক জীবনের একটি অংশ, তবে ভুল বলা হবে না।

প্রতিটি ব্যবসায়ের কিছু নির্দিষ্ট ক্রেতা রয়েছে যারা online এ কিছু নির্দিষ্ট জায়গা তে সক্রিয় থাকে। সুতরাং প্রতিটি ব্যবসার customer দের online জগতে খুঁজে পাওয়া সহজ এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন product এবং service এর জন্য ইন্টারনেট এ খোজও করে থাকে।
বর্তমানে বহু ব্যবসা ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাহায্য নিতে শুরু করেছে : কোন ব্যবসায় একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বি যখন নিজেদের ব্যবসা কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন কোন কিছু করতে শুরু করে তখন অন্য সমস্ত প্রতিযোগীদের উচিত সেই একই জিনিষ কে নিজেদের ব্যবসায় সঠিকভাবে প্রয়োগ করা।

ডিজিটাল মার্কেটিং (digital marketing) কে কাজে লাগানর পেছনে এটাই একমাত্র কারন হতে পারে।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে অনেক বড় বড় কম্পানির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সম্ভব: প্রতিযোগিতা যে কোন ব্যবসার জন্য বড় সমস্যা হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে যে সমস্ত ব্যাবসাতে আগে থেকেই বড় বড় কম্পানিরা ব্যাবসা করছে।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাহায্যে সব কম্পানি (ছোট বা বড়) একই রকম ভাবে উপযুক্ত দর্শকের কাছে পৌছাতে পারে। এক্ষেত্রে SEO অথবা pay-per-click (PPC) advertising সব কম্পানিকেই দর্শকের কাছে নিজেদের ব্যবসা তুলে ধরার সমান সুযোগ দেয়।

ডিজিটাল মার্কেটিংর সাহায্যে খুব সহজে target audience এর কাছে পৌঁছান সম্ভব: গতানুগতিক বিজ্ঞ্যাপন এর তুলনায় ডিজিটাল মার্কেটিং সেই সব লোকের কাছে বেশি করে বিজ্ঞ্যাপন প্রস্তুত করে যারা আসলে সেই জিনিস টি তে আগ্রহী।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাহায্যে খুব ভালো return on investment (ROI) পাওয়া সম্ভব: এখানে যেহেতু শুধু মাত্র আগ্রহী দর্শককে বিজ্ঞ্যাপন দেখানে সম্ভব, তাই বিজ্ঞ্যাপন এর থেকে অনেক বেশি customer আসার সম্ভাবনা থাকে। আর ঠিক এই কারনে এটিকে খুবই cost-effective, marketing method মনে করা হয়।

ডিজিটাল মার্কেটার দের প্রতিনিয়ত যে সমস্ত সমস্যা সম্মুখিন হতে হয় |

ডিজিটাল মার্কেটিং এর অসুবিধা

একাধিক ডিজিটাল চ্যানেল (Digital channel ) এর ব্যবহার : অধিকাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারি আলাদা আলাদা কাজের জন্য একাধিক ডিভাইস এবং চ্যানেল ব্যবহার করে। এবং এর জন্য তাদের বিভিন্ন protocol, specification ও interface ব্যবহার করতে হয়। আর ঠিক আই কারনে digital marketer দের সঠিক customer দের target করতে বেশ কিছুটা সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়।

See also  SEO কি? ‍SEO কিভাবে শিখবো? ‍এসইও কেন গুরুত্বপূর্ণ? SEO কত প্রকার ও কি কি?

ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার : ডিজিটাল চ্যানেলগুলি অন্যান্য traditional মিডিয়াগুলির তুলনায় সস্তা, এটি যে কোনও রকম ব্যবসার জন্য সহজ লোভ্য। এর এই কারনেই গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা কঠিন হয়ে উঠেছে।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন মাধ্যম || Digital Marketing Assets

ইন্টারনেট এ অবস্থিত প্রায় সব কিছু কেই ডিজিটাল মার্কেটিং (digital marketing) এর asset হিসেবে ব্যাবহার করা সম্ভব। এত কিছুর মধ্যে বহুল ব্যাবহ্রিত কিছু জিনিসের উধাহরন হল –

  • Website
  • Branded assets (logo, icon ইত্যাদি)
  • Video content (video add, product demos ইত্যাদি)
  • ছবি বা Images (infographics, product shots, company photo ইত্যাদি)
  • Written content (blog posts, eBooks, product descriptions, testimonial ইত্যাদি)
  • Online এ অবস্থিত বিভিন্ন tools (calculators, interactive content ইত্যাদি)
  • বিভিন্ন জিনিসের Review
  • Social media page বা Social media channels (Facebook, LinkedIn, Twitter, Instagram ইত্যাদি)

অধিকাংশ digital marketing asset গুলি এর অন্তর ভুক্ত , কিন্তু তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন marketer রা customer দের কাছে পৌঁছনর জন্য প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করছে।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিভিন্ন প্রকার || Types of Digital Marketing in Bangla

  • Search Engine Optimization (SEO)
  • Content Marketing
  • Social Media Marketing
  • Pay Per Click (PPC)
  • Affiliate Marketing
  • Native Advertising
  • Marketing Automation
  • Email Marketing
  • Online PR
  • Inbound Marketing
  • Sponsored Content

এবার এই সব বিভিন্ন প্রকার এর ডিজিটাল মার্কেটিং গুলিকে একটু ভালো ভাবে বুঝে নেওয়া যাক ।

সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন বা Search Engine Optimization (SEO)

এটি মুলত একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে কোন ওয়েবসাইট, search engine results page(SERP) এ প্রথম কয়েকটি websete এর মধ্যে উঠে আস্তে সক্ষম হয়। যখন কোন জিনিস কেনার আগে আমরা ইন্টারনেটে বা google-এ সার্চ দেই, তখন সার্চের result হিসাবে আমাদের সামনে যে সমস্ত ওয়েবসাইট গুলি আসে। তাদের মধ্যে প্রথম কয়েকটি ওয়েবসাইট এই বেশিরভাগ লোক ক্লিক করেন।

সুতরাং যদি সঠিক ভাবে SEO করা যায় তবে ওয়েবসাইট এর organic বা free traffic খুব তারাতারি বারতে পারে।

প্রধানত তিন ধরনের SEO হতে পারে: On page SEO, Off page SEO এবং Technical SEO কন্টেন্ট মার্কেটিং বা Content Marketing

এটি content asset তৈরি এবং promotion এর পদ্ধতি। Content Marketing এর সাথে অনেক গুলি কাজ করতে পারে যেমন brand awareness তৈরি করা, ওয়েবসাইট এর traffic growth করা, lead generation করা ইত্যাদি।

See also  কন্টেন্ট মার্কেটিং কি ? কন্টেন্ট মার্কেটিং এর গুরুত্ব ও কেন জরুরি ?

সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং বা Social Media Marketing

মার্কেটিং এর জন্য যে সব ক্ষেত্রে সোশাল মিডিয়া ওয়েবসাইট গুলির সাহায্য নেওয়া হয় । যেমন – Facebook, Twitter, LinkedIn, Instagram, Snapchat, Pinterest ইত্যাদি।

পে-পার-ক্লিক বা Pay Per Click (PPC)

Pay Per Click (PPC) মার্কেটিং এর একটি জটিল পদ্ধতি। এটি ডিজিটাল মার্কেটার দের ট্র্যাফিক এবং conversion বাড়ানোর জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সুযোগ করে দেয়। এক্ষেত্রে মার্কেটার রা বিজ্ঞ্যাপন এ প্রতি ক্লিক অনুযায়ী বিজ্ঞ্যাপন এর মূল্য দেন।

Affiliate Marketing

এটি একটি performance-based advertising যাতে আপনি তখনই commission পাবেন যদি কোন Product বা service sell করেন।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধা || Advantages of Digital Marketing In Bangla

ডিজিটাল মার্কেটিং এর সব থেকে বড় সুবিধা হল এটি খুব সহজে targeted audience এর কাছে বিজ্ঞ্যাপন পৌঁছে দিতে পারে। এবং এটা খুবই cost-effective এবং measurable way তে করা সম্ভব। এছাড়াও brand loyalty বাড়ান এবং online sales বাড়ানোর মত সুবিধা ত আছেই।

Digital marketing এর অন্যান্য সুবিধা গুলি হল:

বিশ্ব জোড়া ব্যাপ্তি (Global reach) – digital marketing বা online marketing এর সাহায্যে খুব কম খরচে বিশ্বের যে কোন জায়গার audience কে target করা সম্ভব।

কম খরচ (Lower cost) – traditional marketing এর ক্ষেত্রে খরচ অনেক বেশি হওয়ায়, ছোট বা মাঝারি ধরনের ব্যাবসা গুলি বড় বড় কম্পানি গুলির সাথে পেরে ওঠে না। কিন্তু digital marketing খরচ তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই কম। এক্ষেত্রে ছোট বা বড় কোন কম্পানিরই খরচের জন্য পিছিয়ে পড়ার সিম্ভাবনা নাই।

মাপ যোগ্যতা (Trackable ও measurable) – web analytics বা অন্যান্য online metric tool এর মাধ্যমে খুব সহজেই online marketing campaign এর কার্যকারিতা মাপা সম্ভব।

ব্যক্তি বিশেষ বিজ্ঞ্যাপন (Personalisation) – যদি জানা থাকে কি ধরনের লোক কোন নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট বা কোন online platform visit করে, তবে খুব সহজেই সেই অনুযায়ী বিজ্ঞ্যাপন দেওয়া সম্ভব। শুধু বিজ্ঞ্যাপন নয় , বিভিন্ন targeted offer ও প্রদান করা সম্ভব।

বিবিধতা (Openness) – digital marketing এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন digital channel কে কাজে লাগানো যায়। যেমন social media কে সঠিক ভাবে কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই এবং অল্প সময়ে customer loyalty এবং company reputation তৈরি করা সম্ভব।

ডিজিটাল মার্কেটার দের কাজ টি?

ডিজিটাল মার্কেটার অর্থাৎ যারা এই ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ টি করেন। এই সব লোকেদের মূল কাজ হল তাদের সুবিধে মত digital channel গুলি ব্যবহার করে দর্শক বা audience এর মধ্যে brand awareness তৈরি করা এবং lead generation করা।

ডিজিটাল মার্কেটার এই কাজ গুলি করার জন্য বিভিন্ন digital channel ব্যবহার করেন যেমন — social media, companyর নিজের website, search engine ranking, email, display advertising এবং blog।

“ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার” আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত এবং তাদের কাজের পরিধি ও অনেক বড়। ছোট কম্পানি গুলি তে প্রধানত এক জন ডিজিটাল মার্কেটার থাকেন যে প্রায় সব ধরনের কাজ দেখেন কিন্তু বড় বড় কম্পানি গুলিতে আকাধিক ডিজিটাল মার্কেটার থাকের যারা এক একটি digital channel এর কাজে নিযুক্ত থাকেরন।

Scroll to Top